আল-আমিন
ইসলামের মূল ভিত্তি পাঁচটি। তারমধ্যে সিয়াম অন্যতম। সিয়াম শব্দটি বহুবচন, একবচন হচ্ছে সাওম। কুরআন ও হাদীসে সিয়াম এবং সওম শব্দের ব্যবহার
রয়েছে । কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের মধ্যে সাধারণত রোজা শব্দের বহুল ব্যবহার দেখা যায়।
“রোযা “শব্দটি ফার্সি শব্দ থেকে এসেছে এর অর্থ বিরত থাকা । ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় “শরী‘আতের দৃষ্টিতে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, যৌন সম্ভোগ ও শরী‘আত নির্ধারিত বিধি-নিষেধ থেকে নিয়তসহ বিরত থাকাকে সাওম বলে।
রোজার সংজ্ঞা সম্পর্কে আইনী রহ. বলেন
“খাওয়া, পান করা এবং যৌনসম্ভোগ -এ তিনটি কাজ থেকে নিয়তসহ বিরত থাকার নাম হলো সাওম।
রোজা রাখার উদ্দেশ্যে হলো তাকওয়া অর্জন করা । আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন: “তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পার “। (সুরা বাকারাহ ১৮৩ )
রমজান মাসে বান্দা তাকওয়া অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ পায়। কেননা এ মাসে অভিশপ্ত শয়তান কে আল্লাহ তায়ালা শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দিয়েছেন । যাতে করে বান্দা বেশি বেশি ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে , দুনিয়া এবং আখেরাতের সফলতা অর্জন করতে পারে।
আল্লাহ তায়ালা যেহেতু এ মাস কে তাকওয়া অর্জনের মাস হিসেবে সুসজ্জিত করছেন। এজন্য রোজাদার ব্যক্তিকে রোজা রাখার সঠিক নিয়ম জেনে , সে অনুযায়ী আমল করে পরিপূর্ণ ভাবে তাকওয়া অর্জন করতে হবে।
পরিপূর্ণ ভাবে রোজার হক আদায় করে তাকওয়া অবলম্বন করতে হলে কিছু বিষয়ের উপর খেয়াল রাখতে হবে । প্রথমত রোজাদার ব্যক্তিকে রোজা রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ৪ টি শর্তের প্রতি খেয়াল রেখে রোজা রাখতে হবে। ১. পানাহার করা ২. পান করা. ৩. যৌন সম্ভোগ এবং এ জাতীয় সকল বিষয় ও শরীয়াতে নিষিদ্ধ কর্ম ৪. নিয়ত সহকারে বিরত থাকতে হবে। এ তিনটি বিষয় থেকে নিয়তসহ বিরত থাকতে হবে। শর্ত পুরণ ব্যতীত পূর্নাঙ্গ রোজা আদায় হবে না। আবার কোন ব্যক্তি যদি নিয়ত ব্যতীত সারাদিন উপবাস,যৌন সঙ্গম, শরিয়তের বিধি- নিষেধ থেকে বিরত থাকে, তাহলে তার উপবাস থাকা, যৌন সঙ্গম থেকে বিরত থাকার দ্বারা রোজা আদায় হবে না। অনুরুপ কোন ব্যক্তি যদি শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকে বাকি যে, শর্তগুলো রয়েছে সেগুলো পূরণ না করে তাহলে তাঁরও রোজা হবে না ।
বর্তমান সময় দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রায় ৮০% মানুষ রোজার হুকুম- আহকাম সম্পর্কে স্পষ্টভাবে সঠিক ধারণা নেই। যার ফলশ্রুতিতে তারা মনে করে , শুধু উপবাস থাকার নাম রোজা । উপবাস দ্বারাই রোজার হক আদায় হয়ে যায়। এজন্য তারা রোজা রাখে,কিন্তু শরিয়তের হারাম , গর্হিত কাজগুলো থেকে বিরত থাকে না। যেমন, রোজা রেখে মিথ্যা ,অশ্লীল, অযথা কথাবার্তা বলা , চোখের যিনা করা , নাটক, সিনেমা, গান দেখা ,গিবত, পরনিন্দা, চোগলখুরি করা, অন্য ব্যক্তির হক নষ্ট করা থেকে বিরত থাকে না। এছাড়া অনেক মানুষকে দেখা যায়, তারা রোজা রাখে কিন্তু নামাজ আদায়ের ব্যাপারে গাফিলতি করে। সারাদিন উপবাস থেকে বিরত থেকে দুটি ফরজ আদায় করে। কিন্তু প্রতিনিয়ত তার উপর যে সতেরো রাকাত নামাজ ফরজ তা অবলীলায় ছেড়ে দেয়।
এভাবে রোজা আদায়ের দ্বারা আল্লাহর তায়ালার নিকট থেকে কোন প্রতিদান পাবে না এবং সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে । কারণ হাদিস শরীফে সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ﷺ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি পাপ, মিথ্যা বা অন্যায় কথা, অন্যায় কর্ম, ক্রোধ, মূর্খতাসুলভ ও অজ্ঞতামুলক কর্ম ত্যাগ করতে না পারবে, তার পানাহার ত্যাগ করাতে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।” (বুখারী)
এরুপ রোজা আদায়কারীকে বদদোয়া এবং তাদের দুভাগ্যে সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ” যে ব্যাক্তি রমজান মাসের রোজা পেল, কিন্তু এ মাসে তাকে ক্ষমা করা হলো না সে ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে চির-বঞ্চিত বিতাড়িত”। ( ইবনে হিব্বান)
আল্লাহ তায়ালা রোজাদার ব্যক্তির জন্য অসংখ্য পুরস্কার রেখেছেন।
হাদিসে কুদসী তে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: “সাওম আমার জন্য আমি এর
প্রতিদান দেব ,সওম জাহান্নামের ঢাল স্বরুপ। (তিরমিযি )
অপর হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত ,তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ” যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখে এবং দাঁড়িয়ে ইবাদত করে ঈমান রেখে ও সওয়াব মনে করে ,তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।” (তিরমিযি )
আরেকটি হাদিসে ,হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাঈয়ান। রোজাদার ব্যতীত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যে ব্যক্তি একবার প্রবেশ করবে সে কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। (তিরমিযি)
আসুন আমরা রহমত , বরকতময় এবং নাজাতের মাসে সিয়ামের শর্তগুলো পরিপূর্ণ ভাবে আদায়ের মাধ্যমে সিয়াম পালন করে নিজের পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নিই । আল্লাহ তায়ালা সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুক।