একজন নাট্যকর্মীর নিজস্ব মঞ্চ ভাবনা
নাট্যদল এথিক প্রযোজিত ও উৎপল দত্ত রচিত "হাঁড়ি ফাটিবে" নাটকের একটি দৃশ্য/Deshnetrow

একজন নাট্যকর্মীর নিজস্ব মঞ্চ ভাবনা

মতামত/কলাম

আমরা যারা নাটকের, অভিনয় জগতের বা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ তারা এক বাক্যে স্বীকার করি যে, মঞ্চনাটক হলো অভিনয় জগতের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে একজন শিল্পীর পূর্ণাঙ্গতা পায়। একমাত্র মঞ্চই পারে একজন শিল্পীকে প্রকৃত শিল্পী হিসাবে গড়ে তুলতে। আর সে কারণেই নাট্যপাগল মানুষরা মঞ্চের সাথে যুক্ত হয়। কিন্তু মঞ্চে কাজ করার আশায় বিভিন্ন নাট্যদলে যোগ দিয়ে মঞ্চকর্মীরা শেষপর্যন্ত কতটুকু সফল হয় সেটাই প্রশ্ন। নাট্যদলের কর্ণধাররা সব সময় আদর্শের কথা বলেন, নাটকের উপর বিভিন্ন তত্ত¡ কথা শোনান। ওনারা বলেন মঞ্চই হলো একজন শিল্পীর প্রতিবাদের জায়গা। এখানে প্রাণের টানে আসতে হবে, নিজেকে উজাড় করে দিয়ে সমাজ বদলের চেষ্টা করতে হবে। সবই ঠিক আছে। কিন্তু আমি দেখেছি বহু নাট্যকর্মী আছে যারা মঞ্চে কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হতাশায় ভোগে। অনেকেরই সাধ থাকে মঞ্চের পাশাপাশি টেলিভিশন বা চলচিত্রে কাজ করে নিজেকে শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার। কিন্তু কতজন সেটা পারছে। গুটিকতক মঞ্চকর্মী হয়তবা বিভিন্ন গণমাধ্যমে অভিনয় করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন । আর বাকিরা নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে প্রতিনিয়ত মঞ্চের সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। নাট্যদলের কর্ণধাররা আবার দলের কর্মীদেরকে মিডিয়াতে যাওয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেন। এর কারণ হলো মিডিয়াতে গেলে মঞ্চে সময় দেয়া কষ্টকর হয়ে যায়। ফলে ওনারা চান না যে, সবাই মিডিয়াতে ব্যস্ত হোক। অথচ ওনারা নিজেদেরকে সব সময় মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত রাখেন বলেই আজ তারকা খ্যাতি পেয়েছেন। এ ব্যাপারে আমার মনে হয় যে প্রতিটি দলের যদি নিজস্ব একটি প্রডাকশন হাউজ থাকতো তাহলে মঞ্চকর্মীরা আরও বেশী উৎসাহিত হতো।

মঞ্চে পেশাদারিত্ব আনার জন্য মঞ্চবোদ্ধারা যদি একটু সচেষ্ট হন তাহলে সেটা সম্ভব। এদেশের সরকার মঞ্চনাটকের জন্য কিছু করবে বলে মনে হয় না। আমরা জানি এদেশের মঞ্চবোদ্ধাদের অনেকেই সমাজে বেশ প্রতিষ্ঠিত। তাই ওনারা নিজস্ব উদ্যোগে যদি একটি ফান্ড গঠন করেন তাহলে সাধারণ মঞ্চকর্মীরা উপকৃত হবেন। এদেশের যারা বড় বড় ব্যবসায়ী বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক তারা কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন বানিয়ে মিডিয়াতে প্রচার করছেন। অথচ সামান্য কিছু অর্থও যদি তারা মঞ্চে দিতেন তাহলে মঞ্চের অনেক উপকার হতো। এ ব্যাপারে মঞ্চবোদ্ধাদের ভূমিকা রাখতে হবে। সাধারণত আমরা নাটকের দলে দেখি যে, একটা নাটকের নির্দেশক এবং দুই একজন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের অভিনেতাই আলোচনাতে আসেন আর বাকি সব হয়তো কোনদিনই আলোচনাই আসেন না। তাই একটি দলের যারা নামিদামী ব্যক্তি আছেন তাদের উচিৎ হবে যাদের সহযোগিতায় তিনি আরও বেশি নামী দামী হচ্ছেন তাদের জন্য কিছু একটা করা।

আর একটা বিষয় আমি দেখেছি আমাদের মঞ্চনাটকের দর্শক খুব কম। সাধারণত কোন একটি দল নতুন নাটক নামালে অন্যান্য দলের কর্মীরা সেই নাটক দেখে অর্থাৎ আমরা নিজেরা নিজেরাই দেখাদেখি করি। বাইরের দর্শক নিজের উৎসাহে খুবই কম আসে বলে মনে হয়। এব্যাপারে মঞ্চবোদ্ধাদের একটু ভাবা উচিৎ। কারণ কয়েক মাস পরিশ্রম করে পকেটের পয়সা খরচ করে যদি খুব বেশি দর্শক নাই দেখে তবে সেই নাটকের সার্থকতা কোথায়। অবশ্য এটাও ঠিক কিছু কিছু দলের নাটক মানুষ অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে দেখতে আসে। এর একটা কারণ হতে পারে ঐ দলগুলো আসলেই নাটক ভালো বানায়। আর একটা কারণ হতে পারে ঐ দল গুলোতে অনেক তারকা শিল্পী আছে। যেমনঃ আরণ্যক, নাগরিক নাট্যস¤প্রদায়, ঢাকা থিয়েটার, থিয়েটার, নাট্যকেন্দ্র প্রভৃতি দলগুলো আসলেই ভালো নাটক বানায় এবং এই সব দলে অনেক বোদ্ধা এবং তারকা শিল্পীও আছেন। স্বভাবতই এই দলগুলোর নাটকে প্রচুর দর্শক হয়। ঢাকা শহরে এতগুলো দলসৃষ্টি না হলে আমার মনে হয় ভালো হতো। যদি ২০টা মান-সম্মত দলই শুধু নাটক মঞ্চায়ন করত তাহলে নাটকের মান আরও সমৃদ্ধ হতো। কেন যে এত দল ভাঙ্গা গড়া হয় বুঝি না। দলের কর্তৃত্ব নিয়ে আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে, নাটক নির্দেশনা দেওয়া নিয়েই মূলত প্রতিটা দলে কোন্দল থাকে। আমার মনে হয় প্রতিটা দলের যারা পরিচালনা পর্ষদে থাকেন তারা যদি একটু ছাড় দেন, একজন আরেকজনের মেধার দিকটা বিবেচনা করেন তাহলে আর বেশি দল ঢাকা শহরে জন্ম নেবে না। আসুন আমরা সবাই মঞ্চকে এগিয়ে নেয়ার স্বার্থে এক সাথে কাজ করি।

লেখক-প্রদীপ কুমার বিশ্বাস

এছাড়াও

সবাই কেন সংখ্যালঘুদের মারে

সবাই কেন সংখ্যালঘুদের মারে?

দেশনেত্র ডেস্ক: বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা দেশবাসীর কাছে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *