কট্টর ডানপন্থী বিজয়ে ইতালিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ

কট্টর ডানপন্থী বিজয়ে ইতালিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক :

ইতালির নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থী জর্জা মেলোনি জয়লাভ  করেছেন। তিনিই ইতালির ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। জর্জা মেলোনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালির সবচেয়ে কট্টর সরকারের নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যদিও নির্বাচনের পর মেলোনি বলেছেন, তার দল ‘ব্রাদার্স অব ইতালি’ সবার জন্য কাজ করবে এবং মানুষের ভরসার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না।

কিন্তু নির্বাচনে দলটির প্রধান ইস্যু ছিল অভিবাসন, এবং অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোর জন্য তারা কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

মিজ মেলোনির জোটের অন্যান্য শরিক দলগুলোরও দাবি অভিবাসন কমানো এবং দেশটির উপর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রভাব দুর্বল করা।

ইউরোপে ঢোকার জন্য প্রতিবছর ভূমধ্যসাগর হয়ে এবং স্থলপথেও প্রচুর মানুষ ইতালিতে যান। এদের মধ্যে প্রচুর বাংলাদেশিও রয়েছেন।

ইতালিতে অভিবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, এই মুহূর্তে ইতালিতে বৈধভাবে কাজ করছেন এক লাখের বেশি বাংলাদেশি।

এছাড়া এখনো কাজকর্ম এবং চাকরির বৈধ কাগজপত্র নেই কিংবা হওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, এমন বাংলাদেশির সংখ্যাও ৫০ হাজারের বেশি।

ইতালির রাজধানী রোম এবং ভেনিসে কাজ করছেন এমন কয়েকজন বাংলাদেশির সাথে কথা বলে দেখা গেছে , তাদের মধ্যে এক ধরণের চাপা উদ্বেগ কাজ করছে।

তবে যারা ইতিমধ্যে কাজ ও বসবাসের বৈধ কাগজপত্র পেয়েছেন তাদের মধ্যে সেটি কিছুটা কম।

কিন্তু যারা এখনো স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাননি তাদের আশঙ্কা যে নতুন সরকার অভিবাসন নীতি কঠোর করলে তাদের বৈধতা পেতে সমস্যা হবে।

এছাড়া মুসলমান বিরোধী মনোভাবের শিকার হতে পারেন এমন আশঙ্কাও রয়েছে অনেকের মনে।

ইতালির বাংলাদেশ সমিতির সাবেক সভাপতি নুর আলম সিদ্দিকী বাচ্চু অবশ্য মনে করেন, অভিবাসীদের প্রতি যত কঠোরই হোক, হয়ত তাদের সরাসরি দেশে ফেরত পাঠাবে না এই সরকার।

কিন্তু নানা নিয়মকানুন করে হয়ত তাদের চাপে রাখা হবে।

মি. সিদ্দিকীর আশংকা নতুন সরকার হয়ত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে আইন করবে, এবং তাদের অভিবাসী বিরোধী প্রচারণা যেভাবে চালাবে তাতে সমাজে ‘বিদেশি বনাম ইতালিয়ান’ একটি দূরত্ব তৈরি হবে।

“যেহেতু এদেশে বেকারত্ব এবং অপরাধের পেছনে ইমিগ্রেন্টদের কারণ বলে মনে করা হয়, সে কারণে নতুন সরকার এসে অনিয়মিত অভিবাসী শ্রমিক এবং অপরাধ ঠেকাতে বিধিনিষেধ দেবে।

এরপর টার্গেট দেবে যে বিদেশি ১০ বছর ১৫ বছর কাজ করছে, তারে ফেরত পাঠাও,” বলেন তিনি।

অভিবাসীরা নানা হয়রানির শিকার হবের এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, “রাজনৈতিকভাবে আমাদের (অভিবাসীদের) নিয়ে প্রচার চালিয়ে রেখে হয়ত কোণঠাসা করে রাখা হবে।

যাতে বেতনের ব্যাপারে আমরা মাথাচাড়া না দেই। আমাদের কায়িক শ্রমকে অল্প পয়সায় নেওয়ার জন্য আমাদের মানসিক চাপে রাখা হবে। হয়ত দেখা যাবে ডকুমেন্ট রিনিউ হচ্ছে না, এরকম নানা কিছু।”

মি. সিদ্দিকী মনে করেন, এসব চাপের কারণে নতুন অভিবাসীদের ইতালিতে নিরুৎসাহিত করা হবে।

সমুদ্রপথে ইতালিতে আসা অভিবাসীদের প্রবেশ মুখগুলোতে যেহেতু কড়াকড়ি হবে, সে কারণে ওই প্রবেশ মুখগুলোতে যখন রেডক্রসের মত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করে, তাদের কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হতে পারে।

এর ফলে সমুদ্রপথে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অভিবাসনেচ্ছু মানুষেরা দুর্ঘটনায় পড়লে তাদের প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়বে।

গত কয়েক বছর ধরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে এবং লিবিয়া হয়ে প্রচুর মানুষ অবৈধভাবে ইতালি এবং গ্রিসে ঢুকেছেন।

এদের অনেকে ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে প্রবেশের উদ্দেশ্যে ইতালিকে একটি ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করেন।

তবে অবৈধভাবে ইতালিতে প্রবেশ করে অনেকে অবৈধভাবে কাজ করছিলেন দেশটিতে।

কিন্তু সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘির উদ্যোগে দেশটির নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে একটি নতুন আইন করা হয়, যার মাধ্যমে অভিবাসীদের অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ ও বসবাসের অনুমতিপত্র, যাকে ‘টেম্পোরারি রেসিডেন্সি’ বলা হয়, দেয়া শুরু হয়েছিল ২০২২ সালেই।

এই কর্মসূচীর মাধ্যমে যেকোন অভিবাসী ইতালির সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এই ‘টেম্পোরারি রেসিডেন্সি’র জন্য আবেদন করতে পারবে।

কোন ব্যক্তিকে প্রথমবার এই অনুমতিপত্র দেয়ার ৫ বছর পর তিনি পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি বা স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

ভেনিসের একটি আবাসিক হোটেলের মালিক আবেগ আল মামুন জানিয়েছেন, টেম্পোরারি রেসিডেন্সিতে সাধারণত প্রথমে ছয় মাসের অনুমতি দেয়া হয়। এরপর নিয়মিত বিরতিতে ওই অনুমতিপত্র নবায়ন করতে হবে।

কিন্তু এক্ষেত্রে নবায়নের সময় কর্তৃপক্ষ চাইলে সেটি অনুমতি নাও দিতে পারে, যার ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হয়ত স্থায়ীভাবে বসবাস এবং নাগরিকত্ব পাবেন না একজন অভিবাসী।

এদিকে, নতুন কট্টর ডানপন্থী সরকারের অভিবাসন নীতিমালার পাশাপাশি মুসলমান বিরোধী মনোভাব রয়েছে বলেও মনে করেন অনেকে। কারণ মিজ মেলোনি ইতিমধ্যেই একাধিকবার ইতালিতে মুসলিম অভিবাসীদের আগমনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

এছাড়াও

অনুপ্রবেশের অভিযোগে গুজরাটে ৫ শতাধিক বাংলাদেশি আটক

অনুপ্রবেশের অভিযোগে গুজরাটে ৫ শতাধিক বাংলাদেশি আটক

দেশনেত্র ডেস্ক : ভারতে অনুপ্রবেশ ও ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে বসবাসের অভিযোগে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *