আল-আমিন :
১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর ট্রেনযাত্রার সুত্রপাত থেকে এ জানবাহনটি ছিল স্বল্প খরচে জনপ্রিয় জানবাহন । কিন্তু বর্তমানে এটি দূর্নীতি এবং গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। পূর্বে যেখানে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়া, দূর্ঘটনা হরহামেশা দেখা মিলত না এখন তা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনার মতো হয়ে যাচ্ছে।
গত ১৭ মার্চ,রবিবার দুপুরে ঢাকা টু জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেসের ৯টি বগি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে লাইনচ্যুত হয়৷ ট্রেনটিতে মোট ১৮টি বগি ছিল৷ বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় ৩০ জন আহত হন৷ যার ফলে এ লাইন দিয়ে চলাচল করা সাতটি ট্রেন আটকা পড়ে। এর পরবর্তীতে ১৮ মার্চ সোমবার রাতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে উত্তরবঙ্গের ঢাকাগামী ট্রেন পঞ্চগড় এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। দুটি ট্রেন ২৪ ঘন্টার ভিতরে লাইনচ্যুত হওয়ায় রেলওয়ে নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে। কেন কিছু দিন পর পর এরকম ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে? একি দূর্নীতির ফলাফল নাকি ট্রেন চলাচল বন্ধের মহা-ষড়যন্ত্র?
এ দূর্ঘটনা সম্পর্কে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার কারণে এরকম ঘটনা ঘটে । যেমন: রেললাইন সিগনাল লাইট ও রেলের ইঞ্জিন, কোচ ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করে না। বাংলাদেশের ৬৩ ভাগ রেললাইন এখন মেয়াদোত্তীর্ণ৷ যার দরুন বারবার ট্রেন লাইনচ্যুত হচ্ছে৷
গত বছরের অক্টোবরে ভৈরবে সিগনাল ত্রুটির কারণে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৮ জন নিহত হন৷ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে ২০২৩ সালে ২৮৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩১৮ জন নিহত ও ২৯৬ জন আহত হয়৷
এ জরিপে যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসাব বলছে, ২০২১ সালে ৪০২টি রেল দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৩৯৬ জন নিহত হয়েছিল৷ ২০২২ সালে ৬০৬টি রেল দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত হয়েছেন৷ এসব হিসেবে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনাও রয়েছে৷ ( সুত্র: আরটিভি)
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, গত বারো বছরে রেলে এক লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, সে টাকার ১% মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণে ব্যায় করলে এ সমস্যা থেকে যাত্রী এবং ট্রেন রেহাই পেত।
রেল মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে; সারা দেশে ৩১৫টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে৷ এর মধ্যে ১৪৩টি ট্রেন বিগত ১৫ বছরে চালু করা হয়েছে৷ এবং নতুন করে ৮৪৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হয়েছে৷ এক হাজার ৩৯১ কিলোমিটার রেললাইন মেরামত করা হয়েছে৷ রেলে বর্তমানে কোচ আছে এক হাজার ৭৮৮; যার ৪৭ শতাংশেরই অর্থনৈতিক মেয়াদকাল শেষ৷ আর সচল ইঞ্জিনের সংখ্যা মাত্র ২৯৫, যার ৬০ শতাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ৷ মালবাহী ওয়াগনের সংখ্যা তিন হাজার ২৪৭, যার ৬৭ শতাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ৷
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, দায়িত্বরত ব্যক্তিরা পুরাতনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামতের পরিবর্তে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়ে বেশি আগ্রহী৷ কারণ,সেখানে অর্থ বরাদ্দ অনেক বেশি, দূর্নীতি করার উপযুক্ত সুযোগ বিদ্যমান।
তাদের দূর্নীতির নমুনা, লিফটং জ্যাক যার মাধ্যমে লাইনচ্যুত ট্রেনের লাইন ঠিক করা হয় । ১৯ হাজার টাকায় ভারত থেকে যেটি আমদানি করা সম্ভব সেটি ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে ক্রয় করছে ঠিকাদারের থেকে। রেলওয়ে একই যন্ত্র ১২ টি ক্রয় করেছে। যার বাজার মূল্য ৩৬ লক্ষ দেখিয়েছে অথচ ভারত থেকে আমদানি করলে মূল্য হত ২,২২,৮০০ টাকা । অপরদিকে একটি ড্রিলিং মেশিন ১৫ গুণ বেশি দিয়ে কেনা হয়েছে । ৬৫ হাজারের জায়গায় ৯ লক্ষ ৬৫ হাজার ৬০০ টাকা। এ অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আরো ১৬ টি যন্ত্র কেনা যেত । এভাবে রেলওয়ে প্রত্যেকটি সেক্টরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দূর্নীতি চলছে ।
অপরদিকে একদল মানুষ আবার ট্রেন বন্ধের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। সংসদীয় কমিটি ট্রেন বন্ধের জন্য জন্য সুপারিশ করেছেন। যেটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের মানুষের দূর্ভোগের শেষ থাকবে না। এজন্য আমরা চাই রেলওয়ে সকল প্রকার ষড়যন্ত্র ,দূর্নীতি থেকে মুক্ত রেখে মানুষকে ট্রেন যাতার পথকে সুগম করা দেয়া হোক।
লেখক,
আল-আমিন
nmdalaminnoman9123@gmail.com
[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দেশনেত্র.কম এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দেশনেত্র কর্তৃপক্ষের নয়। ]