সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা
ফাইল ছবি

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা আসলে কি ?

তরু আহমেদ :

 

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনীতিতে পটো পরিবর্তনের পর বর্তমান রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার। এ সংস্কার কেন্দ্রিক আলোচনায় আবার রয়েছে  নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক। কেউ বর্তমান পদ্ধতি চালু রাখার পক্ষে, কেউ চান সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা।

নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের শুরুতেই এখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনায় সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রাধান্য পাচ্ছে। ফলে সাধারণ জনগণের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে “সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা” টি আসলে কি?

১২ অক্টোবর ‘‘রাষ্ট্র সংস্কার ও সংবিধান সংশোধনী’ বিষয়ে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত বিষয়টি  সামনে আসে। সেমিনারে বিএনপি, সিপিবি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। এর মধ্যে বিএনপি ছাড়া অন্য দলগুলো আনুপাতিক পদ্ধতির পক্ষে নিজেদের মত দেয়। জামায়াতে ইসলামী তাদের সংস্কার প্রস্তাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা চালুর কথা বলেছে। তবে বিএনপি বলছে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের কথা।

প্রচলিত যে পদ্ধতি আছে যাকে আসন ভিত্তিক নির্বাচন বলে তাতে একটি আসনে যে  প্রার্থী সর্বেচ্চ ভোট পান তিনিই নির্বাচিত হন। এভাবে সব সংসদীয় আসনে ভোটের ফল নির্ধারণ হয়। এখন একটি আসনে যদি এক লাখ ভোটের মধ্যে এক জন প্রার্থী ৪০ হাজার ভোট পান। এবং আরো দুই জন প্রার্থী মিলে যদি ২৫ এবং ৩৫ হাজার মোট ৬০ হাজার ভোট পান তাহলে তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকে না। যদিও বিজয়ী প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের প্রতিনিধিত্ব করেন না।

অন্যদিকে, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থায় নির্বাচনে কোনো প্রার্থী থাকে না। নির্বাচন হয় দলীয় প্রতীকে। যে দল যত ভোট পায় শতকরা হার অনুযায়ী তারা সংসদে সেই অনুপাতে আসন পাবে।  বাংলাদেশে মোট ৩৫০ আসনের সংসদ। এরমধ্যে ৩০০ আসনে সরাসরি প্রার্থী ভিত্তিক নির্বাচন হয়। আর ৫০ নারী আসন ভাগ হয়  নির্বাচনে কোন দল কত আসন পেল তার অনুপাতে। এখন ৩০০ আসনে যদি আনুপাতিক নির্বাচন হয় তাহলে কোনো দল যদি ৫০ শতাংশ ভোট পায় তাহলে তারা ১৫০টি আসন পাবে। এইভাবে যারা ৩০ শতাংশ ভোট পাবে তারা সেই অনুপাতে ৯০টি আসন পাবে। আর যারা ১০ শতাংশ ভোট পাবে তারা সেই হারে ৩০টি আসন পাবে।

এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে প্রকৃত অর্থেই জনরায়ের প্রতিফলন ঘটে। আর নির্বাচনে যেহেতু প্রার্থী থাকবে না, প্রতীকের ওপর নির্বাচন হয় তাই কালো টাকার প্রভাব, মনোনয়ন বাণিজ্য, ভোট কেন্দ্র দখল এগুলো থাকবে না।

বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায়  আসলে প্রকৃত অর্থে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে না,এর একটি বড় উদাহরণ ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন। ২০০১ সালের এ নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিলো মোট ভোটের ৪১ শতাংশ। সংসদে  ১৯৩টি আসলে তারা জয় লাভ করেছিল।  আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিলো ৩৯ শতাংশ ভোট। কিন্তু সংসদে আসন পেয়েছিলো মাত্র ৩০টি।

এখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশে আসন ভিত্তিক না হয়ে আনুপাতিক নির্বাচন হচ্ছে। বিশ্বের ১৭০ টি দেশের মধ্যে ৯১টি দেশে আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু আছে। আর দিন দিন এই নির্বাচন ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।

 

 

 

এছাড়াও

রাজধানীতে নারী সাংবাদিককে মারধর ও শ্লীলতাহানী, গ্রেপ্তার তিন

রাজধানীতে নারী সাংবাদিককে মারধর ও শ্লীলতাহানী, গ্রেপ্তার তিন

দেশনেত্র প্রতিবেদক : রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় এক নারী সাংবাদিককে হেনস্তার ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *