শৈত্যপ্রবাহ কী, কেন হয় জানেন কি
সংগৃহীত ছবি

শৈত্যপ্রবাহ কী, কেন হয় জানেন কি?

দেশনেত্র নিজস্ব প্রতিনিধি:

শৈত্যপ্রবাহ কী, কেন হয়?

বাংলাদেশে শীত মৌসুমে দফায় দফায় শৈত্যপ্রবাহ আসে। এই সময় তীব্র শীত অনুভূত হয়। ২৪ ডিগ্রির মতো তাপমাত্রাকে সাধারণত স্বস্তিদায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে ডিসেম্বর মাস থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বেশি শীত অনুভূত হয়।
শৈত্যপ্রবাহ কী, কেন হয়?

যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার স্বাভাবিক গতি প্রকৃতি পাল্টে যাচ্ছে। তাই শীতকালের সময় এবং ধরন পুরোপুরি আগের মতো হচ্ছে না। তবে প্রতি বছরই বাংলাদেশে কয়েকটি শৈত্যপ্রবাহ আসছে।

শীতকালে তাপমাত্রা কমতে কমতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছালে তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলে ধরে নেয়া হয়।

আবহাওয়াবিদরা জানান, সমতল অঞ্চলে সাধারণত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে এবং স্বাভাবিক থেকে তার পার্থক্য ন্যূনতম ৫ ডিগ্রি হলে আবহাওয়ার সেই পরিস্থিতিকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।

শৈত্যপ্রবাহের ধরণ

তাপমাত্রাভেদে শৈত্যপ্রবাহকে সাধারণ চার ভাগে ভাগ করা হয়।

বাতাসে তাপমাত্রা সাধারণত ১০ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রিতে নেমে এলে মাঝারি এবং ৬ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে সেটাকে বলা হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।

শৈত্যপ্রবাহ কখন হয়?

বাংলাদেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে শুরু করে জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শীত থাকে। এ সময়ই শৈত্যপ্রবাহ দেখা যায়।

একেকটি শৈত্যপ্রবাহ তিন থেকে সাতদিন, কখনো কখনো তারও বেশিও দীর্ঘায়িত হতে পারে।

বাংলাদেশে ডিসেম্বর মাসে সাধারণ এক থেকে দুইটি, জানুয়ারিতে দুই থেকে তিনটি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে একটি শৈত্যপ্রবাহ দেখা যায়।

শৈত্যপ্রবাহ কেন হয়?

শীতকালে সূর্য বিষুব রেখার দক্ষিণে অবস্থান করে। বাংলাদেশের অবস্থান বিষুব রেখার উত্তরে। এই সময় সূর্য দক্ষিণে হেলে থাকে। তখন দিন ছোট হয় এবং রত বড় হয়।

ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, সূর্য একবার উত্তর দিকে এবং একবার দক্ষিণ দিকে যায়। সবচেয়ে দক্ষিণে যায় ২১/২২ ডিসেম্বর। সবচেয়ে উত্তরে যায় জুনে। এই মুহূর্তে (শীতকালে) সূর্য একেবারে দক্ষিণ দিকে আছে; অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড বরাবর। সূর্যের তাপে ওই অঞ্চলের বাতাস গরম হয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। ফলে সেখানে যে শূন্যস্থান তৈরি হচ্ছে সেটা পূরণের জন্য পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে বাতাস সেদিকে প্রবাহিত হয়। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে সেটা উত্তর দিক থেকে আসছে। আর আমাদের উত্তর দিকে বরফাচ্ছন্ন হিমালয় পর্বতমালা। সেখান থেকে বরফ শীতল বাতাস বাংলাদেশের উপর দিয়ে বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর হয়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড অঞ্চলের ওই শূন্যস্থান বরাবর যাচ্ছে।

গরমের সময়ও একই রকম ঘটনা ঘটে। জুন-জুলাই মাসে সূর্যের তাপ উত্তর দিকে বেশি থাকে। ফলে সেখানকার বাতাস গরম হয়ে উপরে ওঠে। তখন বাতাস ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর হয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে হিমালয়ে পৌঁছায়। এই সময় বাতাস হিমালয়ে, গারো পাহাড়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বৃষ্টিতে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের ওপর বর্ষণ হয়।

‘এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় গ্লোবাল সার্কুলেশন। এর ফলেই আমরা একবার দক্ষিণা বাতাস, আরেকবার উত্তরের শীতল বাতাস পাই।’ বলেন অধ্যাপক আইনুন নিশাত।

তিনি বলেন,
হিমালয়ের দিক থেকে আসা বাতাসের যে প্রবাহ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে দক্ষিণে যাচ্ছে সেটা যদি কোনো প্রাকৃতিক কারণে নিচে নেমে আসে (অনেক কারণে নামতে পারে) তখন তাকে বলা হয় শৈত্যপ্রবাহ।

আবার গরমের সময় অর্থাৎ মে, জুন, জুলাইয়ের দিকে আরবের উপর দিয়ে ইরান, পাকিস্তান হয়ে গরম বাতাস বঙ্গোপসাগরে এসে ঘুরে বাংলাদেশের উপর দিয়ে উত্তর-পূর্ব কোনার দিকে যায়। ফলে হঠাৎ হঠাৎ আগুনের হল্কার মতো গরম অনুভূত হয়।

তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাতাসের এই গতিবিধি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

বেশি কুয়াশা মানেই কি শৈত্যপ্রবাহ?

কুয়াশার সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের সরাসরি তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি কুয়াশা থাকলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে খুব একটা দেখা যায় না।

দিনের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে এলে বেশি কুয়াশা দেখা যায়। কিন্তু সংজ্ঞানুসারে এটাকে শৈত্যপ্রবাহ বলা যায় না।

অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন,
বাতাসের যদি প্রবল বেগ থাকে তাহলে কুয়াশা বেশি দেখা যায় না, বাষ্পটা উড়িয়ে নিয়ে যায়। যেদিন কুয়াশা বেশি থাকে সেদিন দেখা যায় তেমন বাতাস নেই, জলীয় বাষ্পটা উপরে উঠে ওখানেই থেকে যায়।

তিনি বলেন, কুয়াশা বৃষ্টিরই একটা ফরম। সূর্যের তাপেও কুয়াশা কমে যায়। অনেক সময় সকালে কুয়াশা দেখা যায় কিন্তু বাতাস শুরুর হওয়ার পর সেটা সরে যায়।

অপরদিকে শৈত্যপ্রবাহের সময় শীতল বাতাস শরীর থেকে অনবরত তাপ শুষে নিয়ে চলে যায়। তাই শীতের অনুভূতি তীব্র হয়।

শীতকালে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। ছবি: সময় সংবাদ

শৈত্যপ্রবাহের সময় করণীয়

শৈত্যপ্রবাহের সময় ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ বেড়ে যেতে দেখা যায়। হাসপাতালগুলোতেও শীতজনিত নানা ধরনের রোগ নিয়ে অনেক মানুষ ভর্তি হন। এসব রোগী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক থাকেন বয়স্ক এবং শিশু। তাই ঠাণ্ডার হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

ঠাণ্ডা খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কুসুম গরম পানি পান করা করুন। হাঁপানির রোগীদের শীতের শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।

প্রয়োজন মতো গরম জামাকাপড় পরুন; সঙ্গে কান টুপি এবং গলায় মাফলার বাঁধুন।

চেষ্টা করুন খালি পায়ে না থাকার। বাড়িতেও বিশেষ করে ফ্লোরে হাঁটাহাঁটির সময় উষ্ণ স্যান্ডেল পরে থাকুন। পায়ে উলের মোজা পরে থাকুন।

শীতকালে গ্রামেগঞ্জে অনেক সময় আগুন পোহাতে গিয়ে দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। বিশেষ কারণে আগুন পোহাতে হলেও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ রাখা উচিৎ।

শীতে গরু, ছাগলের মতো গবাদি পশুসহ গৃহপালিত বিভিন্ন প্রাণীর রোগ বালাই বেড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে চট দিয়ে তাদের গা মুড়িয়ে রাখা যেতে পারে।

শীতের সময় সবজি, রবিশস্যসহ বিভিন্ন ধরণের ফসলের ভালো উৎপাদন হয়। কিন্তু শৈত্যপ্রবাহ এবং ঘন কুয়াশার কারণে ফলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এক্ষেত্রেও তাই বাড়তি সতর্কতা নেয়া প্রয়োজন।

শীতে ঘন কুয়াশার কারণে পরিবহন চলাচলেও বাড়তি সতর্কতা জরুরি। কারণ এই সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এছাড়াও

স্বস্তির সুখবর দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর

স্বস্তির সুখবর দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর

  দেশনেত্র প্রতিবেদক :   চলমান দীর্ঘ তাপপ্রবাহ দ্রুতই শেষ হতে যাচ্ছে বলে বহু প্রতীক্ষার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *