এবারের নতুন মন্ত্রিসভায় পুরোনোদের পাশাপাশি নতুন মুখের সংখ্যাই বেশি। এর মধ্যে ৫ জন আগে বিভিন্ন মেয়াদে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী থাকলেও বিদায়ী মন্ত্রিসভায় ছিলেন না। অর্থাৎ তারা আবার সুযোগ পেয়েছেন। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন ১৪ জন। এই ১৪ জনের মধ্যে টেকনোক্র্যাট হিসেবে আছেন একজন। তিনি হলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। সরাসরি কোনো রাজনীতিতে ছিলেন না তিনি। আগুনে পোড়া মানুষের চিকিৎসায় নিজেকে নিবেদিত করেই পরিচিত হয়ে উঠেন দেশের মানুষের কাছে। নজর কাড়েন সরকারের উপরের মহলের। ফলে হঠাৎ করেই তাকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসায় তিনি নিজেও যেন চমকে গেছেন। অন্যসব মহলেও ‘চমক’ হয়ে উঠেছেন। এদিকে মাঝে দুই মেয়াদ পর আবার একজন চিকিৎসককে নিজেদের সেক্টরের মন্ত্রী হিসেবে পেয়ে উচ্ছ্বসিত চিকিৎসক সমাজের প্রতিনিধিরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন গতকাল শনিবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমিও উচ্ছ্বসিত। অপরিসীম কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। আমি চিন্তাও করিনি যে মন্ত্রী হব।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে আমার প্রথম লক্ষ্য থাকবে চিকিৎসাসেবাকে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে আরও কতটা সহজ ও নাগালের মধ্যে নিয়ে যাওয়া যায় সেদিকে। এই মুহূর্তে এটাই বড় চাওয়া। বাকি অগ্রাধিকার বুঝেশুনে ঠিক করব। এ জন্য একটু সময় দরকার।’
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বিএমএর সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভালো হয়েছে। আমাদের প্রফেশনের মানুষকে পেয়েছি। তিনি এই মন্ত্রণালয়ের সমস্যা সম্ভাবনা ভালো বুঝবেন। আমরাও তাকে প্রয়োজনমতো সহায়তা করব। আমরা খুবই খুশি।’
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা তো বড় চমক। আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত ১০ বছর পর একজন চিকিৎসককে আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে পাওয়ায়। এ ছাড়া ডা. সামন্ত লাল সেন খুবই যোগ্য ও দক্ষ একজন প্রশাসনিক সংগঠক হিসেবে প্রমাণ দিয়েছেন বাংলাদেশের বার্ন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠায়। আশা করি তিনি এখানেও সফল হবেন। মানুষ হিসেবেও তিনি বেশ ভালো।’
স্বাস্থ্য অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা খুবই আশাবাদী যে স্বাস্থ্য খাতে একজন নিখাদ সৎ মানুষ এসেছেন। যাকে নিয়ে এখনো কোনো বির্তক বা দুর্নীতির কিছু শুনিনি। তিনি ক্যারিশম্যাটিকও আছেন। যদিও তার সামনে অনেক ধরনের কঠিন চ্যালেঞ্জ আছে। এসব দক্ষতার সঙ্গে ওভারকাম করতে হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর তাকে শুভেচ্ছা জানাতে যাওয়া কর্মকর্তাদের কাছে ব্যক্ত করা প্রতিক্রিয়ায় ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে স্নেহ করতেন জানতাম, কিন্তু এতটা স্নেহ করতেন তা জানতাম না। প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর বড় দায়িত্ব দিয়েছেন। যে আস্থা রেখে তিনি আমাকে মন্ত্রিত্ব দিয়েছেন আমি তা যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে বিভিন্ন হাসপাতালে সরাসরি গিয়ে পরিদর্শন করার কথা বলেছেন এবং যেকোনো প্রয়োজনে তার (প্রধানমন্ত্রী) কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণের কথা বলেছেন। আমার এক জীবনে এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কিছু নেই।’
এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আজ রবিবার সকাল ১০টায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে যাবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। সেখানে দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন এবং মন্ত্রণালয় সম্পর্কে অবহিত হবেন। পরে বেলা ১২টায় মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। এর আগে গত ১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এদিকে নতুন সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া উপলক্ষে বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত ডা. সামান্ত লাল সেনের ইন্দিরা রোডের বাসভবনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে এসেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব, বিভিন্ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বিএমএ ও স্বাচিপ নেতারা, স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন স্তরের নেতারাসহ সর্বস্তরের মানুষ।
শুক্রবার রাতে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা বিভাগের দুই সচিব জাহাঙ্গীর আলম ও আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) সাইদুর রহমান, যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) আঞ্জুমান আরা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পরিচালকসহ মন্ত্রণালয়ের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চিকিৎসাসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি ডা. সামন্ত লাল সেনকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ প্লাস্টিক সার্জন সোসাইটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
সামন্ত লাল সেন ১৯৪৯ সালের ২৪ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ববঙ্গের সিলেটের হবিগঞ্জের নাগুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সেন্ট ফিলিপস হাই স্কুল থেকে ১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক ও সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন।
১৯৭৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ১৯৮০ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা থেকে ‘ডিপ্লোমা ইন স্পেশালাইজড সার্জারি’ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে জার্মানি ও ইংল্যান্ডে সার্জারিতে আরও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি।