বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ ছাড়া সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
অন্যদিকে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বুধবারও (১০ জানুয়ারি) অভিনন্দন জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ও সংগঠন। তবে বেশ কিছু ব্যক্তি-সংগঠন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।
আজ কানাডা-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানায়। এ ছাড়া মিয়ানমার ও নেপালও প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
এর আগে ভারত, চীন, রাশিয়া, জাপানসহ প্রায় ৩১টি দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ পর্যন্ত অভিনন্দন জানিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে ফোনও করেছেন।
তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য গ্রেগরি মিকস এক্স পোস্টে লিখেছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে সমর্থন দিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান সব কটি রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে ইইউ। ইইউর উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি জোসেপ বোরেল এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এই প্রতিক্রিয়া জানান।
ব্রাসেলসে ইইউ সদর দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ইইউ গত রবিবার বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফল লক্ষ করেছে। একই সঙ্গে ইইউ-বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্ব যে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের মূল্যবোধের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত, সে বিষয় পুনর্ব্যক্ত করেছে। এই নির্বাচনে প্রধান সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি বলে ইইউ হতাশা ব্যক্ত করছে।
বুধবার অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যবিষয়ক দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়া সরকার মনে করে, এমন এক পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে, যেখানে সব পক্ষ অর্থপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্যভাবে অংশ নিতে পারেনি, তা দুঃখজনক।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে সহিংসতা এবং বিরোধী দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারের মতো যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া উদ্বিগ্ন। অস্ট্রেলিয়া ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের কাছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেছে।
কানাডার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কানাডা বাংলাদেশি নাগরিকদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রশংসা ও সমর্থন করে এবং নির্বাচনের আগে ও ওই সময় সংঘটিত ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার ঘটনার নিন্দা জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সহিংসতায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের সবার প্রতি আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি।’
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশে প্রত্যেকের মানবাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি একদম প্রকাশ্যে সব পক্ষকে সব ধরনের সহিংসতা পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রত্যেকের মানবাধিকার ও প্রত্যেকের আইনের শাসনের সুযোগ পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সুসংহতকরণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। তারা বাংলাদেশে যে সহিংসতা দেখেছেন, সে বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অবশ্যই উদ্বিগ্ন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ে মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল প্রচন্দ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। গতকাল পৃথকভাবে দেশ দুটি এ অভিনন্দন জানায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে কানাডা-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর সংগঠনটি এ অভিনন্দন জানায়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। সুইজারল্যান্ডে হতে যাওয়া ফোরামের ৫৪তম বার্ষিক সভায় প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণও জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি দেন সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়াব।
বাংলাদেশে সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি বলে অভিযোগ করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে রাইট টু ফ্রিডম। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশে ভোটকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির প্রতি সমর্থন দিয়েছেন ডেমোক্রেটিক দলের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য গ্রেগরি মিকস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘সহিংসতার রিপোর্ট তদন্তের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে আহ্বান জানিয়েছে তার প্রতি আমি সমর্থন জানাই।’
উল্লেখ্য, গ্রেগরি মিকস ১৯৯৮ সাল থেকে নিউইয়র্কে ডেমোক্রেটিক দল থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য। তিনি ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদে পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি এখনো এই কমিটির একজন পদস্থ সদস্য।