স্পেশাল করসপন্ডেন্ট :
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ এর রূপকল্প বাস্তবায়নে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এটুআইকে। আর এটুআই এর নাম সর্বস্ব বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের আড়ালে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এটুআই এর সিনিয়র কনসালটেন্ট জনাব এইচ এম আসাদুজ্জামান।
জনাব এইচ এম আসাদুজ্জামান এটুআই এর তিনটি প্রজেক্ট দেখতেন। সাউথ সাউথ কোঅপারেশন, ফিউচার অফ স্কিলস এবং ফিউচার অফ ওয়ার্ক। সাউথ সাউথ এর মাধ্যমে উনি সারা বিশ্বে গরিব দেশগুলোতে এটুআই এর তৈরী সিস্টেম গুলো বিক্রি করার চেষ্টা করতেন এবং সরকারের খরচেই নিজের পছন্দের কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতেন প্রকিউরমেন্ট ছাড়াই। জর্দান ও সোমালিয়াতে এই কাজ তিনি করেছেন যার কোনোটাই আসলে ব্যবহৃত হয়নি। এছাড়াও উনি নাইস বলে একটি প্লাটফর্ম পরিচালনা করতেন এবং দাবি করতেন চাকরি প্রার্থী ২০ লক্ষ মানুষের সিভি নাকি সেখানে আছে। আদতে এর কিছুই নেই। উনি নাইস কে একটি ম্যাচমেকিং প্লাটফর্ম বলে প্রচারণা করতেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসির সাথে যোগসাজশে উনি একের পর এক চাকুরী মেলা আয়োজন করতেন।
এছাড়া স্কিল টিমের লিডার হিসাবে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৩/৪ টি ওয়ার্কশপ অঅয়োজন করতেন। প্রতিটাতে গড়ে ২.৫ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা সরকারি বাজেট নিতেন। ৬০-৭০ হাজার আসলে খরচ করে বাকি টাকা ‘স্টাফ ফান্ডের নামে ক্যাশ সরিয়ে ফেলতেন। উনার টিমের দুইজন এমপ্লয়ি একাজে উনাকে সরাসরি সহায়তা করতো। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেই পাওয়া যাবে। এছাড়াও এবিষয়ে ইউএনডিপি তে সরাসরি উনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। যার কপি রয়েছে। উনি এক ধাক্কায় ঢাকার আগারগাঁও তে এরকম ৮৪ টি ওয়ার্কশপ করেছে। যার বিল ভাউচার সবই ভুয়া। এভাবে ২০১৯ থেকে ২০২৩ এ ১১ কোটি টাকা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং এটুআই এর অর্থ শুধুমাত্র ওয়ার্কশপে উনি খরচ করেছেন বলে প্রমান এসেছে। যেকোনো ছুতোতে কক্সবাজার সহ ঢাকার বাইরে ওয়ার্কশপ আয়োজন করে সরকারি বেসরকারি কিছু কর্মকর্তাকে প্লেজার ট্রিপ দিয়ে অনেক প্রভাব বিস্তার করেন। এর সব ডকুমেন্ট এটুআই এর ফিন্যান্স টিমের কাছে রয়েছে। এছাড়াও প্রায় ২০ এর অধিক বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে এম ও ইউ সাক্ষর করেন এবং এদের কাজকে নিজের নাইস প্লাটফর্মের কাজ বলে চালিয়ে দেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইউএনডিপি তে প্রায় ৮ জন সাবেক ও বর্তমান নারী সহকর্মী উনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে( যার ফর্মাল অভিযোগের কপি হাতে আছে), সেখানে যৌন হয়রানি , নারীদের অবমাননা , বিশেষ সুন্দরী অধস্তনদের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির চেষ্টা (না মানলে চাকুরী থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য চাপ প্রদান ) সহ সুনির্দিষ্ট ও বিশদ অভিযোগ দাখিল হয়। জাতিসংঘের স্বতন্ত্র তদন্ত দোল নিউয়র্ক থেকে দেশে এসে তদন্ত শুরু করে এবং অভিযোগ কারীদের কাছ থেকে বয়ান ও নেয় (এই কপিও হাতে এসেছে) । আসাদ নিজের অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে এবং সরকারি কনসালটেন্ট হিসাবে আরো বেশি বেতনে সাথে সাথেই আবার এটুআই তে নিজের পজিশনেই জয়েন করে। এটুআই এইচ আর এর কাছে এর বর্ণনা ও প্রমান আছে। স্বজনপ্রীতি ও নৈতিকতার একটি বিশাল অবক্ষয় এটি।
এছাড়াও উনি চলমান তদন্ত প্রভাবিত করার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে এটুআই এর প্রজেক্ট ডাইরেক্টর, তদন্ত কমিটির সদস্য সহ আইসিটি বিভাগের নানা কর্মকর্তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করেন এবং বিভিন্ন গুজব কে সত্য তথ্য হিসাবে চালিয়ে দিয়ে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। উনি সম্প্রতি এটুআই তে নিজের বিভিন্ন পূর্ববর্তী অনুজ কলিগদের উনি আবার এটুআই তে ফেরত আসছেন এবং বর্তমান আইসিটি উপদেষ্টার সাথে উনার দেখা এবং কথা হয়েছে হিসাবে প্রচার করছেন ভীতি প্রদর্শনের জন্য।
জনাব আসাদুজ্জামান এর নামে বেনামে রয়েছে বিপুল সংখ্যক অর্থ ও সম্পদ, এরমধ্যে রাজধানীর আগারগাঁও তে নিজে চাকুরীরত অবস্থায় ফ্লাট কিনেছেন এবং অত্যন্ত বিলাসবহুল ভাবে ইন্টেরিয়র করেছেন। এছাড়াও ওয়ার্কশপের তছরূপকৃত টাকা দিয়ে উনি তালতলায় একটি নতুন নির্মীয়মান বাণিজ্যিক মার্কেটে বেনামে তিন তিনটি দোকান পজেশন কিনেছেন। এসব সম্পদ কোনভাবেই তার আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানার জন্য জনাব আসাদুজ্জামান সাহেবের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি- ইউএনডিপির অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচি শুরু করা হয়।
পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০১৮ সালে এটুআই প্রোগ্রামকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে ন্যস্ত করা হয়।২০২০ সালে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এর নাম পরিবর্তন করে এসপায়ার টু ইনোভেইট (এটুআই) রাখা হয়।