জাতীয় পার্টির পরাজিত নেতারা বিক্ষুব্ধ
সংগৃহীত

জাতীয় পার্টির পরাজিত নেতারা বিক্ষুব্ধ

দেশনেত্র ডেস্ক:

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পরে জাতীয় পার্টির পরাজিত নেতারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন৷ নির্বাচনে অংশগ্রহণ, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা ও সবশেষে অনেক আসনে জাপার শোচনীয় পরাজয় তারা মেনে নিতে পারছেন না৷

বুধবার (১০ জানুয়ারি) জাপা প্রার্থীরা সব একাট্টা হচ্ছেন চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে৷ বেলা ১১টায় রাজধানীর বনানী কার্যালয়ে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ ডেকেছেন৷

জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীল নেতাদের বরাতে মঙ্গলবার মধ্যরাতে জানা যায়, এবার নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে পরাজিত জাপা নেতারা ঢাকায় জড়ো হয়েছেন৷ বিকেলের পরে তারা জাপার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদের দ্বারস্থ হন৷ সেখানে একপর্যায়ে উপস্থিত হন জাপার আরেক কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা৷ এ ছাড়াও জাপার ছয়জন প্রেসিডিয়ামসহ ২১ জন সিনিয়র নেতা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে থাকা একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাপা প্রার্থীদের ক্ষোভের প্রধান কারণ শীর্ষ নেতাদের সিদ্ধান্ত বদলের নাটক৷ নির্বাচনে অংশগ্রহণ, আওয়ামী লীগের জোটে শরিক হওয়া, আসন সমঝোতা নিয়ে তাদের নাটকীয়তায় দলটির নেতারা এখন জনগণের কাছে হাসির পাত্র হয়ে উঠেছেন বলে সভায় অভিমত আসে৷

সভায় বিভিন্ন আসনের পরাজিত প্রার্থীরা বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে লাভবান হয়েছেন চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ৷ তারা নিজেদের আসনে জয়লাভ নিশ্চিত করার পরে অন্য প্রার্থীদের নিয়ে ভাবেননি৷ আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচনকে বৈধতা দিতে জাপা প্রার্থীদের মাঠে নামিয়ে দিয়ে কোনো সহযোগিতা করেননি শীর্ষ তিন নেতা।

জাপার প্রভাবশালী এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘জাপা নেতাদের ভরাডুবির জন্য জি এম কাদের সরকারকে দোষারোপ করছেন৷ আওয়ামী লীগ কারচুপি করবে, এটা তো জানাই ছিলো৷ এই ডামি নির্বাচনে যেতে কেউ রাজি ছিলো না৷ কজন শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জি এম কাদের কী বুঝে নির্বাচনে গেলেন তার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।’

জাপার দুই কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বৈঠকের কথা স্বীকার করলেও বিস্তারিত বলতে নারাজ৷

এবার ভোটের আগে ঢাকা-১ আসনে সালমা ইসলাম, ঢাকা-৪  আসনে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও ঢাকা-৬ আসনে কাজী ফিরোজ রশীদের বিষয়ে সমঝোতা করতে পারেনি জাপা৷ আওয়ামী লীগ এবার ঢাকার কোনো আসনে ছাড় দিতে নারাজ ছিলো৷ পরে অনেক দেন-দরবার করে জি এম কাদেরের স্ত্রী ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের ঢাকা-১৮ আসনে  ছাড় পেয়ে যান৷ শেরীফা কাদের জাপার রাজনীতিতে এখনো শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেননি৷ দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও তার ভূমিকা নেই৷ তাকে সরাসরি নির্বাচনে সংসদ সদস্য করে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছিলেন জি এম কাদের৷ তবে তা ভণ্ডুল হয়েছে৷ ভোটের ফলাফলে ঢাকা-১৮ আসনে তৃতীয় স্থানে থাকা শেরীফা কাদের জামানত হারাতে বসেছেন৷
মঙ্গলবারের সভায় শেরীফা কাদেরের বিষয়েও প্রেসিডিয়াম সদস্যরা ক্ষোভ জানান৷

জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের বিষয়েও নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছে জাপা৷ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছিলেন, আজ বুধবার সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না জাপার নতুন এমপিরা৷ তবে সেই সিদ্ধান্ত বদলে যায় গতকাল সন্ধ্যায়৷ জাপার দপ্তর বিভাগ থেকে জানানো হয়, জাপার ১১ জন নবনির্বাচিত এমপি বুধবার শপথ নেবেন৷

শপথ গ্রহণের নাটকীয়তা নিয়েও জাপার কো চেয়ারম্যান ও প্রেসিডিয়াম সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷

এদিকে ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরে জাপায় এখন প্রবল শঙ্কা৷ শেষ পর্যন্ত জাপার নবনির্বাচিত ১১ জন সংসদ সদস্য প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসতে পারবে কী না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে৷ ৬২টি আসনে জিতে আসা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে আলাদা একটি জোট গঠনের গুঞ্জন রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গণে৷  সেই জোটকে প্রধান বিরোধী দলের আসনে দেখা যেতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে৷ আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনেকে সেই বিরোধী দলে যাবেন বলে মত দিয়েছেন।

এমন ঘটনা ঘটলে জাতীয় পার্টির রাজনীতি আরও স্তিমিত হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন জাপা নেতারা৷ তাদের ভাষ্য, জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের রাজনৈতিক ও আন্তজার্তিক পরিমণ্ডলে যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছিলে তা হারিয়ে ফেলবেন৷

নির্বাচনের আগে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ নিজেকে নির্বাচনের মাঠ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন৷ তখন দলে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা যায়৷ এখন জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন ‘ঐক্যবদ্ধ’ জাপায় ফাটল দেখা দিলো৷

এছাড়াও

আজ হলি আর্টিজান হামলার ৯ বছর

আজ হলি আর্টিজান হামলার ৯ বছর

দেশনেত্র ডেস্ক : রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ৯ বছর পূর্ণ হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *